অবশেষে চাপে পড়ে কৈলাসহর মহিলা থানার পুলিশ অভিযুক্ত আব্দুল জলালকে বুধবার গভীর রাতে আটক করে তেরো মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে কৈলাসহর আদালতে প্রেরণ করেছে। আট মার্চ নিউজ প্রকাশের পর লজ্জায় পড়ে নিজেদের ভাবমূর্তি অটুট রাখতে গিয়ে নিউজ প্রকাশের চারদিন পর তেরো মার্চ বুধবার গভীর রাতে আটক করেছে কৈলাসহর মহিলা থানার পুলিশ। উল্লেখ্য, কৈলাসহরের মহিলা থানার অধীনস্থ ইছবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন নং ওয়ার্ডের পাখিরবাদা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রুখিয়া বেগম। রুখিয়ার জন্মের পর থেকেই রুখিয়ার মা মানষিক অবসাদগ্রস্ত। রুখিয়ার বাবা পেশায় দিনমজুর। অভাব অনটনের মধ্যেই রুখিয়া কৈলাসহর কলেজ থেকে ২০১৮সালে রাস্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে পাশ করে ২০২২সালে টেট সম্পন্ন করে ২০২২সালের ডিসেম্বর মাসে সরকারি স্কুলের শিক্ষিকার চাকুরী পেয়েছিলো। রুখিয়া ঊনকোটি জেলার পেচারতলের নালকাটা এডিসি ভিলেজের অন্তর্ভুক্ত এক সরকারি স্কুলে শিক্ষিকতা করে। কয়েক বছর পূর্বে কৈলাসহরের পশ্চিম ইয়াজিখাওড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জলালের সাথে ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়েছিলো এবং পরবর্তী সময়ে তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। পরবর্তী সময়ে ২০২৫সালের কুড়ি জানুয়ারি কৈলাসহর আদালতে রেজিষ্ট্রি করে দুজনের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন পর রুখিয়া জানতে পারে যে, আব্দুল জলাল রুখিয়াকে বিয়ে করার পূর্বে আরও দুটি বিয়ে করেছে এবং আব্দুল জলালের চার পাঁচটি সন্তানও রয়েছে। এসব জেনে বিয়ের আঠারো দিন পর ২০২৫ সালের সাত ফেব্রুয়ারি রুখিয়া কৈলাসহর আদালতে আব্দুল জলালকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। এই ডিভোর্স দেওয়ার পর থেকে রুখিয়ার জীবনে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলছে। ঊনিশ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রুখিয়া ঘুম থেকে উঠে প্রাকৃতিক কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে আব্দুল জলাল ধারালো দা দিয়ে রুখিয়ার মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে আব্দুল জলাল পালিয়ে যায়। রুখিয়ার চিৎকার চেচামেচি শোনে গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসে এবং গ্রামবাসীরা সাথে সাথেই অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের কর্মীদের খবর দেয়। খবর পাওয়া মাত্রই অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রুখিয়াকে উদ্ধার করে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। রুখিয়ার মাথায় এতই জোরে আঘাত লাগে যে, মাথায় আটটি সেলাই লাগে। কুড়ি ফেব্রুয়ারি সকালে রুখিয়ার বাবা কৈলাসহর মহিলা থানায় আব্দুল জলালের নামে লিখিত অভিযোগ করে। প্রায় ছয়দিন রুখিয়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর চব্বিশ ফেব্রুয়ারি রুখিয়া জেলা হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়িতে আসে। দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে তিন মার্চ থেকে রুখিয়া প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ও আব্দুল জলাল রুখিয়াকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলতো, ‘তুই সুস্থ হয়ে কিভাবে পেচারতলে গিয়ে চাকুরী করবে সেটা আমি দেখে নেবো’। স্কুলে যাওয়া শুরু করার পর আব্দুল জলাল রুখিয়াকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলে যে, ‘আগামী পনেরো দিনের মধ্যে মেরে ফেলবে এবং তোর কোন বাবা আছে বলে রাখিছ আমি পনেরো দিনের মধ্যে তোকে মেরে ফেলবো’। এই হুমকি পাবার পর থেকে রুখিয়া ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। বাড়িতে মা মানসিক অবসাদগ্রস্ত এবং বৃদ্ধ বাবাও অসুস্থ। মা বাবা ছাড়া বাড়িতে রুখিয়ার কেউ নেই। প্রানে মেরে ফেলার হুমকি পাবার পর থেকে রুখিয়া নিজ বাড়িতেও বসবাস করছে না। গ্রামে একদিন ওর বাড়ি, পরের দিন আরেক বাড়ি এভাবে রুখিয়া লুকিয়ে লুকিয়ে বসবাস করছে। প্রানে মেরে ফেলার হুমকির রেকর্ডিংটি রুখিয়া পুলিশকে দিয়েছিলো। গ্রামবাসীরা বার বার দাবী করেছিলো আব্দুল জলাল তার গ্রামে নিজ বাড়িতেই ছিলো এবং প্রকাশ্যেই ঘুরাফেরা করতো। অথচ কৈলাসহর মহিলা থানার পুলিশ নাকি আব্দুল জলালকে খুঁজে পাচ্ছিলো না। অসহায় নিরীহ দুঃস্থ ভীতসন্ত্রস্ত রুখিয়া বেগম নিজের প্রান বাঁচানোর জন্য আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনে একজন নারী হয়ে আট মার্চ রুখিয়া বেগম রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর কাছে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রানভিক্ষা চেয়েছিলো। মূখ্যমন্ত্রী যেন এব্যাপারে একট পদক্ষেপ নেন। এখবর আট মার্চ আমাদের চ্যানেলে সম্প্রসারিত হবার পর কৈলাসহর মহিলা থানার পুলিশ চাপে পড়ে গতকাল গভীর রাতে কৈলাসহরের কুবঝার এলাকা থেকে আব্দুল জলালকে গ্রেফতার করেছে। কি কারনে এতদিন পুলিশ আব্দুল জলালকে গ্রেফতার করেনি এব্যাপারে কৈলাসহর মহিলা থানার ওসি রিপিতা ভট্টাচার্য কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ওসি রিপিতা ভট্টাচার্যীর এহেন কান্ডকারখানায় ছি: ছি: রব উঠেছে গোটা কৈলাসহর মহকুমায়। কৈলাসহর মহিলা থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে একের পর এক কেলেংকারী করেই যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক কালে কৈলাসহরের বিধায়ক ওসি রিপিতা ভট্টাচার্যীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই সরব হয়েছিলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post সফল কূল চাষীর কূল গাছ পরিদর্শন করলেন ঋষ্যমুখ কৃষি দপ্তরের তত্বাবধায়ক
Next post দুর্ঘটনায় এক যুবক, নেশা সিরাপ পেল পুলিশ!
%d bloggers like this: