পিভি নরসিমা রাওকে ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। রাম মন্দির নির্মাণের জন্য পদক্ষেপ করেছিলেন প্রাক্তন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী। আর সে জন্যই তাঁকে মরনোত্তর ভারতরত্ন দেওয়া উচিত বলে যুক্তি দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা।
সম্প্রতি লালকৃষ্ণ আডবানীকে ভারতরত্ন সম্মান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ শুক্রবার দেশের প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও, চৌধুরী চরণ সিং ও দেশের সবুজ বিপ্লবের জনক কৃষিবিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথনকে মরণোত্তর ভারতরত্ন সম্মান দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, পিভি নরসিমা রাও, চৌধুরী চরণ সিং ও এমএস স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন সম্মান দেওয়া হবে।
মূলত রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নরসিমা রাওয়ের ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠলেও, তিনি যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ভাষায় পারদর্শী ছিলেন, তা মনে করিয়েছেন মোদী। নিজের এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, সাহিত্য, ইতিহাস থেকে শুরু করে বিজ্ঞানের মতো বিষয়ে রাওয়ের অবাধ বিচরণের কথা। নয়ের দশকের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও সমস্ত ছুঁত্মার্গ ভুলে ভারতে বাজার অর্থনীতির প্রবেশ ঘটিয়েছিলেন। ভারতের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনিই। বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে তার পর কখনও আর টান পড়েনি। ১৯৯৩ সালে যখন বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনা ঘটে, তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরসিমা রাও।
অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য সরকারে ১৯৬২ – ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি আইন ও তথ্য মন্ত্রী ছিলেন; ১৯৬৪ – ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন, আইন ও অছি বিষয়ক মন্ত্রী, ১৯৬৭-তে ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী, ১৯৬৮ – ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রী। ৯৭১ – ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রামটেক থেকে তিনি লোকসভায় নির্বাচিত হন। পেশাদার আইনজীবী রাও ১৯৮৪ সালের জুলাই অবধি ছিলেন ভারতের বিদেশ মন্ত্রী. ডিসেম্বর অবধি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। সঙ্গীত, সিনেমা ও থিয়েটার ভালবাসতেন। গল্প-উপন্যাস, রাজনৈতিক ভাষ্য রচনা, তেলুগু এবং হিন্দিতে কবিতা লিখেছিলেন তিনি।
ভারতের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন চৌধুরী চরণ সিং। উত্তর প্রদেশ বিধানসভায় তিনি প্রথম নির্বাচিত হন ১৯৩৭ সালে ছাপড়াউলি থেকে এবং ১৯৪৬, ১৯৫২, ১৯৬২ এবং ১৯৬৭ সালে ওই কেন্দ্রেরই প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৪৬ সালে পণ্ডিত গোবিন্দবল্লভ পন্থ সরকারের সংসদীয় সচিব নিযুক্ত হন। ১৯৫১ সালের জুন মাসে তিনি রাজ্যের পূর্ণ মন্ত্রী নিযুক্ত হন। কংগ্রেস ভাগ হয়ে যাওয়ার পর চরণ সিং ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কংগ্রেসের সমর্থনেই দ্বিতীয়বার উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তবে, ওই বছরই ২ অক্টোবর রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়। পড়াশোনা ও লেখালিখি করতে ভালবাসতেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী। কমদিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন, কিন্তু তাঁর জনপ্রিয়তা ছিল অসীম।
স্বাধীনতার পরের কয়েক দশক, দেশের প্রতিটি মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য ভারতকে বিদেশের সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হত। কিন্তু, সেই পরিস্থিতির বদল ঘটেছিল গত শতাব্দীর ছয় ও সাতের দশকে। ভারতে ধান ও গমের উত্পাদন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আর সেই ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন প্রখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী এমএস স্বামীনাথন। তাঁকে বলা হত ভারতের সবুজ বিপ্লবের জনক। প্ল্যান্ট জেনেটিক্সের ক্ষেত্রে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজই ভারতের কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিল।
