শুক্রবার শপথ বাক্য পাঠ করলেন তিপ্রা মথা দলের ১৩ জন বিধায়ক। বিধানসভার অধিবেশন কক্ষে বিধায়কদের শপথ বাক্য পাঠ করান প্রোটেম স্পিকার বিনয় ভূষণ দাস। শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরক তিপ্রা মথা দলের সুপ্রিমো প্রদ্যুত কিশোর দেব্বর্মন। তিপ্রা মথা দল যদি এই বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই না করত তাহলে বি জে পি ৫০’র অধিক আসন পেত। প্রদ্যুত কিশোর দেব্বর্মনের এই বক্তব্যের একাধিক প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে।
তিপ্রা মথা দল এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী ভোট কেটেছে এই প্রশ্নের উত্তরে বিস্ফোরক জবাব তিপ্রা মথা চ্যায়ারম্যানের। সারা রাজ্যে যখন বাম-কংগ্রেস জোট বি জে পি আই পি এফ টি জোটকে হারাতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছিল ঠিক তখনই তিপ্রা মথা দলের ভুমিকা কি হবে তা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে একাধিক জল্পনা দেখা দিয়েছিল। যদিও বিধানসভা নির্বেচনে বিরোধী ঐক্য মঞ্চে আসেনি তিপ্রা মথা দল। ফলাফলের পর থেকেই বিরোধী শিবিরে একটাই কথা তিপ্রা মথা অ-জনজাতি আসনে প্রার্থী দেওয়াতেই বি জে পি দল পুনরায় শাসন ক্ষমতায় আসতে সুযোগ পেয়েছে। ভোট কাটাকাটির প্রশ্নে কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মনের গলায়ও প্রায় একই সুর শোনা গেছে।
তাছাড়া বিভিন্ন মহলেও এই বিষয় নিয়েই আলোচনা। কেনই বা তিপ্রা মথা দল বিভিন্ন অ-জনজাতি আসন গুলোতে প্রার্থী দিল? কি ছিল তিপ্রা মথা দলের মুল লক্ষ্য? ত্রিপুরার মসনদে বসা নাকি শুধুমাত্র জনজাতি ভোট ব্যাঙ্কের উপর খেলা? তাও প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে । কারন তিপ্রা মথা দল এটা নিশ্চই জানত তাদের ভোট ব্যাঙ্কে বাঙালী ভোট যাবে না, কারন তাদের মূল দাবী গ্রেটার তিপ্রা ল্যান্ড। সুতরাং বাঙালী ভোট না পেলে বিভিন্ন জেনারেল ক্যাটাগরির আসন গুলোতে জয়লাভ-ও স্বপ্ন স্বরূপ বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের। তাহলে কেনইবা মথা সুপ্রিমো অ-জনজাতি আসন যেমন মোহনপুর, মজলিশপুর, কমলাসাগর, ধনপুর, বক্সনগর, প্রমোদ নগর, চন্দীপুর, পানিসাগর ইত্যাদি ২২ টি অ-জনজাতি আসনে মথা নিজেদের প্রার্থী দেয় আর তা-ই বিরোধী বাম-কংগ্রেস জোটের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় বলে গুঞ্জন। যদিও এই বিষয় মানতে নারাজ প্রদ্যুৎ কিশোর নিজে।
তাছাড়া ফলাফলের পাই- চার্টেও একই বিষয় উঠে এসেছে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩২ আসন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় বি জে পি দল, যেখানে বিরোধী শিবিরে ভোট গেছে ৬১ শতাংশ। শুক্রবার এই নিয়েও সাওয়াল করেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন।
ফলাফলের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে মোট ১৯ টি এমন বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে যেখানে বামগ্রেস প্রার্থী থেকে বি জে পি প্রার্থীর জয়ের ব্যাবধান তিপ্রা মথার প্রাপ্ত ভোট থেকে অনেক কম বলা চলে ৫ হাজারের তফাৎ। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক
১) মোহনপুর
বি জে পি – ১৯৬৬৩
কংগ্রেস – ১০৫৮৮
তিপ্রা মথা – ১২২৭৮
জয়ের ব্যাবধান – ৯০৭৫
২) খয়েরপুর
বি জে পি – ২২৪৫৩
কংগ্রেস – ১৮৩৪৩
তিপ্রা মথা – ৫১৪৭
জয়ের ব্যাবধান – ৪১১০
৩) মজলিশপুর
বি জে পি – ২১,৩৪৯
সি পি আই এম – ১৬,১৭৭
তিপ্রা মথা – ৬৯৯৬
জয়ের ব্যাবধান – ৫১৭২
৪) কমলাসাগর
বি জে পি – ১৯০৫২
সি পি আই এম – ১৭৩০৮
তিপ্রা মথা – ২৩১১
জয়ের ব্যাবধান – ১৭৪৪
৫) বিশালগড়
বি জে পি – ২২৩১৪
সি পি আই এম – ২০৯৮৮
তিপ্রা মথা – ১৬০৬
জয়ের ব্যাবধান – ১৩২৬
৬) ধনপুর
বি জে পি – ১৯১৪৮
সি পি আই এম – ১৫৬৪৮
তিপ্রা মথা – ৮৬৭১
জয়ের ব্যবধান – ৩৫০০
৭) তেলিয়ামুড়া
বি জে পি – ১৬৭৫৫
কংগ্রেস – ১২৬০৩
তিপ্রা মথা – ৮৯০৪
জয়ের ব্যবধান- ৪১৫২
৮) শালগড়া-কাকড়াবন
বি জে পি – ২৩৬২৫
সি পি আই এম – ১৮৫৭৪
তিপ্রা মথা – ৫৮৯৬
জয়ের ব্যাবধান – ৫০৫১
৯) রাজনগর
বি জে পি – ২০৮৪৯
সি পি আই এম – ১৯৫১৪
তিপ্রা মথা – ২২৬৭
জয়ের ব্যাবধান – ১৩৩৫
১০) জোলাইবাড়ি
আই পি এফ টি – ১৭৬২১
সি পি এই এম – ১৭২৪৬
তিপ্রা মথা – ৮৮৩৩
জয়ের ব্যাবধান – ৩৭৫
১১) মনু
বি জে পি – ১৫৪৬৯
সি পি আই এম – ১৪৯২২
তিপ্রা মথা – ১৩৬৫০
জয়ের ব্যাবধান – ৫৪৭
১২) অমরপুর
বি জে পি – ১৭৯৮৯
সি পি আই এম – ১৩৩৯৫
তিপ্রা মথা – ৮১১৬
জয়ের ব্যাবধান – ৪৫৯৪
১৩) কমলপুর
বি জে পি – ১৮২৮৭
কংগ্রেস – ১৩০২৭
তিপ্রা মথা – ৭৫৩৪
জয়ের ব্যাবধান – ৫২৬০
১৪) সুরমা
বি জে পি – ১৭৩১৩
সি পি আই এম – ১২৪৭৫
তিপ্রা মথা – ১১৪৬৭
জয়ের ব্যাবধান – ৪৮৩৮
১৫) পাবিয়াছড়া
বি জে পি – ১৯৫৪২
কংগ্রেস – ১৯১৩৪
তিপ্রা মথা – ৪৩৩১
জয়ের ব্যাবধান – ৪০৮
১৬) চণ্ডীপুর
বি জে পি – ১৭৩৯৫
সি পি আই এম – ১৬৮১৮
তিপ্রা মথা – ৫৩৭৯
জয়ের ব্যাবধান – ৫৭৭
১৭) বাগমা
বি জে পি – ১৮৯০৫
সি পি আই এম – ১৭৪৪৪
তিপ্রা মথা – ২২৮১
জয়ের ব্যাবধান – ১৪৬১
১৮) পানিসাগর
বি জে পি – ১৫৭৪৫
সি পি আই এম – ১৩২৪৭
তিপ্রা মথা – ৭৬১২
জয়ের ব্যাবধান – ২৪৯৮
১৯) পেচারথল
বি জে পি – ১৭৭৮১
সি পি আই এম – ৯৮০৮
তিপ্রা মথা – ৯৬৪৪
জয়ের ব্যাবধান – ৭৯৭৩
শুধু তা-ই নয় এমন বহু কেন্দ্র রয়েছে যেখানে তিপ্রা মথা দল দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। যদি সেখানে বাম-কংগ্রেস জোট কোন প্রার্থী না দিত তাহলে হয়তো বিরোধী শিবিরের সফলতা আসত। নির্বাচনের ফলাফলের বিশ্লেষণের পর রাজনৈতিক মহলের চর্চা বি জে পি দল প্রতি নির্বাচনে যেই নির্বাচনী কৌশল নেয় তার সাথে বিরোধীদের নির্বাচনী কৌশল অনেকটাই আলাদা। বিরোধীরা সেই দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে।