নয়াদিল্লি: ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়া নাগরিকদের জন্য আধার কার্ডই হয়ে উঠতে পারে সবচেয়ে বড় ভরসা—এমনটাই স্পষ্ট জানাল দেশের শীর্ষ আদালত। শুক্রবার বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে চলা বিহারের বিশেষ ও নিবিড় পরিমার্জন মামলার শুনানিতে এই পর্যবেক্ষণ উঠে আসে।

আদালতের বক্তব্য, যেসব ভোটারদের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে, তারা কমিশনের ডিক্লারেশন ফর্ম অনুযায়ী ১১টি নথি অথবা আধার কার্ড জমা দিতে পারবেন। এবং এই নথি জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া অনলাইনেই সম্পন্ন করা যাবে।

কমিশনের যুক্তি বনাম আদালতের পর্যবেক্ষণ

শুনানির শুরু থেকেই আধার কার্ডকে ভোটার তালিকার জন্য ব্যবহার করার বিরোধিতা করে এসেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের দাবি ছিল—ভুয়ো আধার তৈরি করা সম্ভব, তাই এটিকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে ধরা যায় না।

কিন্তু শুনানি যত এগিয়েছে, কমিশনের এই যুক্তি ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারিয়েছে। কারণ বাস্তব হল—এ দেশে বহু মানুষের জন্মশংসাপত্র নেই। তাদের কাছে একমাত্র ভরসা আধার ও ভোটার কার্ড। এই কার্ডই যদি বাদ পড়ে, তবে একজন নাগরিক কীভাবে নিজের পরিচয় প্রমাণ করবেন? আদালত ও বিশেষজ্ঞ মহলে বারবার এই প্রশ্নই উঠে এসেছে।

আদালতের কড়া মন্তব্য

শুক্রবারের শুনানিতে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী কমিশনকে বলেন—
“আপনাদের যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তার দিকে নজর দিন। যখন পরিমার্জনের কাজ হয়েছিল, তখন আধারকে মান্যতা দেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন আধারকে প্রয়োজনীয় নথি হিসাবে চিহ্নিত করলে ভোটার যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সময় অনেকটা বাঁচবে। তাই একবার ভেবে দেখুন।”

আইন বিষয়ক সংবাদমাধ্যম লাইভ ল–এর প্রতিবেদনে এই পর্যবেক্ষণের কথা উঠে এসেছে।

এর আগেও সুপ্রিমের পরামর্শ

এটাই প্রথম নয়। এর আগের একাধিক শুনানিতেও কমিশনকে আধারকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলা হয়েছিল—

  • খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়া ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম-নথি প্রকাশ করতে হবে।

  • বাদ যাওয়া ভোটাররা চাইলে আধারকে পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহার করে নিজেদের নাম তালিকাভুক্ত করতে পারবেন।

সারকথা

সব মিলিয়ে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আধার কার্ডকেই ভোটার যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ‘শেষ কথা’ হিসেবে মানতে চাইছে সুপ্রিম কোর্ট। কমিশনের আপত্তি থাকলেও আদালতের পর্যবেক্ষণ বলছে—ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও দ্রুত যাচাইয়ের জন্য আধারকে গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post একসাথে সাসপেন্ড ৪ অফিসার, প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা নিয়ে
%d bloggers like this: