কৈলাসহরের অশান্ত পরিবেশকে শান্ত করতে ঊনকোটি জেলা পুলিশের উদ্যোগে শান্তি বৈঠক ইরানি থানায়। মূলত বিভেদ নয় ঐক্য চাই,দাঙ্গা নয় সৌভাতৃত্ব চাই। এই স্লোগানকে সামনে রেখে ঊনিশ অক্টোবর শনিবার বিকেলে ঊনকোটি জেলা পুলিশ ও শহর উত্তরাঞ্চলের জনসাধারণের উদ্যোগে অনুস্টিত হয়েছে এক শান্তি বৈঠকের। উক্ত শান্তি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক বিরজীত সিনহা, ঊনকোটি জেলার বরিস্ট আইনজীবী সন্দীপ দেবরায়, গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন মোঃ বদরুজ্জামান, কৈলাসহরের মহকুমা শাসক প্রদীপ সরকার, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকার, ইরানি থানার ওসি অরুণোদয় দাস, রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারপার্সন মবস্বর আলি সহ অন্যান বিশিষ্টজনেরা। শান্তি বৈঠকে স্বাগত ভাষণ রাখতে গিয়ে ইরানি থানার ওসি অরুণোদয় দাস বলেন, প্রায় তিনমাস পূর্বে তিনি ইরানি থানার ওসি হয়ে কৈলাসহরে এসেছেন। উনার আসার পর একটি নির্বাচন হয়েছে, যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা ইরানি থানা এলাকায় কোনো ধরনের অশান্তির সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু রাজ্যের অন্য জেলার কিছু অশান্ত বাতাবরণকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে যে অশান্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে যা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই সকলের প্রতি শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার এবং কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে,কদমতলায় কিছু হিংসাত্মক ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত সোমবার রাতে উত্তর ত্রিপুরায় একটি শিব মন্দিরের উপর হামলা চালানো হয়েছে বলে খবর রটে যায়। এই ঘটনার পর পালটা হামলা চালানো হয় এলাকারই নির্মীয়মাণ একটি মসজিদ চত্বরে। শারদোৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে অশান্ত হয়ে উঠেছিল উত্তর ত্রিপুরার পেকুছড়া এলাকা। আর পেকুছড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠে ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর। পেকুছড়ায় নির্মীয়মাণ মসজিদে আক্রমণের প্রতিবাদে “সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিটির” উদ্যোগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় ইরানি থানায় ডেপুটেশন চলাকালে উত্তেজিত জনতার মধ্যে থাকা কিছু দুষ্কৃতকারী কর্তব্যরত অবস্থায় থাকা সি.আর.পি.এফ কর্মীর গাড়ি লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে থাকলে আহত হন দুই সি.আর.পি.এফ কর্মী এবং মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকারের গাড়ির গ্লাস ভেংগে দেওয়া হয়েছিলো।সাথে সাথে নামানো হয় বিশাল পুলিশ ও টি.এস.আর বাহিনী। আর তারপর থেকেই গোটা মহকুমা ব্যাপী ছড়াতে থাকে গুজব। কখনও খবর আসে মন্দির ভাঙার, তো কখনো খবর আসে মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার। শুরু হয় রাতব্যাপী প্রশাসনের দৌড়ঝাপ। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনায় মহকুমার সর্বত্র অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। আর সেই অশান্ত পরিবেশকে শান্ত করতে শনিবার ইরানি থানায় এক শান্তি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। শান্তি বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক বীরজিত সিনহা বলেন, দূর্গা পূজার চাঁদা তোলা নিয়ে কদমতলায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, সেই গাড়িতে চিকিৎসার জন্য শিলচর যাবার উদ্দেশ্যে কৈলাসহরের লোক ছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কৈলাসহরে দু-একটি ঘটনা ঘটেছে যা খুবই নিন্দনীয়। আগামী দিনে যাতে এধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো অগঠন না ঘটে তার প্রতি আহ্বান রাখেন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির ভাইস চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান বলেন, উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের আজ শপথ নিয়ে যেতে হবে। কৈলাসহরের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘ দিনের যে সম্প্রীতির ইতিহাস রয়েছে সেটা বজায় রাখতে হবে। শান্তি বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহকুমা পুলিশ আধিকারীক জয়ন্ত কর্মকার বলেন, এই শহর শান্তির শহর। সম্প্রতি একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও সকল ধর্মের শান্তিপ্রিয় মানুষের সহযোগিতায় পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।তিনি আরও বলেন যে, বর্তমানে ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। দু-এক দিনের মধ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরায় চালু হবে এবং সামাজিক মাধ্যমে কোন প্রকারের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা মূলক পোস্ট না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। কেননা গুজবের ফলে বড় ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়ে যেতে পারে। তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে,গত ১৪ই অক্টোবর ইরানি থানার অধীনে থাকা যুবরাজনগর গ্রামের মসজিদে অগ্নিকাণ্ডের সাথে যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে | শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্য দিয়েই এলাকার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব বলে তিনি মনে করেন
বাইট- জয়ন্ত কর্মকার।
তবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এখনো ভারতীয় ন্যায় সংহিতা আইনের ১৬৩ ধারা বলবৎ রয়েছে গোটা মহকুমায়। এছাড়াও শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিতে গিয়ে বক্তব্য রাখেন কৈলাসহর মহকুমা শাসক প্রদীপ সরকার,বিজেপি নেতা বিধান দাস,আইনজীবী সন্দীপ দেবরায় সহ অন্যান্যরা। পুলিশের বিশেষ এক সুত্রের খবর অনুযায়ী জানা যায়, যুবরাজনগর মসজিদে আগুন এবং সম্প্রীতি বিনষ্ট করার বিরুদ্ধে ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যার মধ্যে আকাশ মিয়া নামের এক যুবককে শনিবার দুপুরে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে আবদুল জলিল ও আব্দুল আহাদ দুই অভিযুক্ত ভারতের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পথে বাংলাদেশ সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী বি.জি.বির হাতে আটক হয়েছে। অন্য দুই অভিযুক্তের নাম সংবাদ লিখা পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে আশা করা যাচ্ছে শনিবারের শান্তি বৈঠকের পর ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরবে কৈলাসহর।