পাকিস্তানের ভোট গণনা চলছে। বৃহস্পতিবার রক্তক্ষয়ী নির্বাচনের পর গণনা শুরু হলে দেখা যায় জেলবন্দী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা একদা ক্রিকেট তারকা ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহেরিক ই ইনসাফ পার্টি বাকিদের থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে।
বাকি দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল হল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ এবং বিলাবল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি।
পাক সংবাদ মাধ্যম ‘ডন’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩৩৬ আসনের জাতীয় সংসদের নির্বাচনের এখনও পর্যন্ত গণনায় ১২০ আসনে এগিয়ে ইমরান খানের পার্টি অথবা তাদের সমর্থিত নির্দলরা। তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও তার ভাই শাহরাজ ইতিমধ্যে জিতে গিয়েছেন। অন্যদিকে বিলাবল ভুট্টোর দল অনেকটাই পিছিয়ে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান শুধু নন, তার সরকারের সময়কার বিদেশ মন্ত্রী সহ দলের একাধিক নেতা বর্তমানে জেলে। অনেক নেতা গ্রেফতারি এড়াতে দল ছেড়েছেন। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল জেলে থেকেও ভোটে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইমরান। তাঁর জনপ্রিয়তা এখনও তুঙ্গে। তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ভোট গণনায়
যদিও শেষ পর্যন্ত ইমরান বাজিমাত করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ঘর সংশয় আছে। কারণ প্রাক্তন এই ক্রিকেট তারকাকে আর ইসলামাবাদের কুর্সিতে চাইছে না পাক সেনাবাহিনী।
নয়া দিল্লির কূটনৈতিক মহলের খবর ফের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন নওয়াজ শরীফ। ফলে গণনার প্রাথমিক প্রবণতা যাই হোক না কেন ইমরান খানের দল ক্ষমতায় আসতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।
সে দেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল ও খবরের কাগজগুলি এখনও পর্যন্ত ত্রিশঙ্কু সংসদের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করছে।
বৃহস্পতিবার ভোটের দিনটি পাকিস্তান ছিল প্রবলভাবেই হিংসার কবলে। ভোট গ্রহণের সময় অপপ্রচার ঠেকাতে সারাদেশেই বৃহস্পতিবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছিল। তার পরেও হিংসা ঠেকানো যায়নি। শুধু বৃহস্পতিবারই ৫০ জনের কাছাকাছি মানুষ নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে বেশ কিছু শিশু আছে, আছেন পুলিশ কর্মীরা। আগের দিন ভয়াবহ বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ২৪ জনের। তারও আগে একটি পুলিশ চৌকিতে জঙ্গি হানায় মৃত্যু হয় দশ পুলিশ কর্মীর।
এমন হিংসাত্মক পরিস্থিতির মধ্যেই প্রচার ও ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন গণনা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় কিনা সেটাই দেখার।
নয়া দিল্লির কূটনৈতিক মহল মনে করছে এই মুহূর্তে পাকিস্তানের যে তিনজন প্রধানমন্ত্রীদের লড়াইয়ে আছেন তাদের মধ্যে ভারতের জন্য তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারেন নেওয়াজ শরীফ। নওয়াজের সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভালো বোঝাপড়া গড়ে উঠেছিল। ২০১৭ সালে তাঁকে দেশ ছাড়তে হয়। পরের বছর সেনা সমর্থনে প্রথমবার পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান আবার সেনার ধাক্কাতেই তাঁকে সরে যেতে হয়। এখন কূটনৈতিক মহলের খবর পাকিস্তান সেনাবাহিনী নামাজকে পুনরায় দেশের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসাতে চলেছে। ফলে গণনায় ইমরানের দল এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা কার হাতে যাবে সেটাই এখন সবচেয়ে বড় চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।