গোমতী জেলার উদয়পুর পশ্চিম খিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা নয় বছরের এই শিশুটি এখনো পর্যন্ত কোন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি, যদি সে ঠিক সময় ভর্তি হত তাহলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়াশোনা করত। কিন্তু এখনো শিশুটি স্কুলের বেঞ্চে বসে নিজের স্বপ্ন পূরণের মুখোমুখি হতে পারছে না, এমনকি বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠে খেলতে পারছে না। ছোটবেলায় এই শিশুটি মা-বাবাকে হারিয়েছে। তার জন্মের প্রমাণপত্র সঠিক সময়ে বের হবে আর সেই অজুহাত দেখিয়ে কোন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করাচ্ছে না। নিজের বাবা মাকে শৈশবেই হারিয়েছে কিন্তু তবু প্রজ্ঞার প্রান জুড়ে শুধুই পড়াশুনার তাগিদ। নিজের জেঠু এবং জেঠিমার কাছে একটু একটু করে বড় হচ্ছে প্রজ্ঞা। তারাও চাইছে ছোট্ট প্রজ্ঞা পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠুক । কিন্তু শিশুটির পড়াশোনার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি ব্যবস্থাপনা। বাবা প্রণব দাস এবং মা মন্টি দাস প্রয়াত । তাদের ছোট্ট প্রজ্ঞা মণি দাস এখনো বাবা-মাকে খুঁজে বেড়ায়। আর পাঁচটি শিশুর মত সেও মা বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ভাগ্য সেটা হতে দেয়নি। উদয়পুরের পশ্চিম খিলপাড়ার এই ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচিত হচ্ছে এখন । সরকারি খাতায় নাম না তুলেও জেঠু এবং জেঠিমার কাছে পড়াশোনা করছে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞার মা-বাবার মৃত্যুর পর তার অভিভাবক জেঠু এবং জেঠিমা থাকা সত্ত্বেও সে স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না। উদয়পুরের রমেশ স্কুল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সহ বেশ কয়েকটি স্কুল শিশুটির ভর্তি নিয়ে নানান তালবাহানা করে আসছে বলে অভিযোগ। ছোট্ট প্রজ্ঞার ইচ্ছা সে পড়াশুনা করে বড় হয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার কিংবা পুলিশ হতে চায় । কিন্তু নয় বছর বয়স হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত স্কুলে ভর্তি হতে পারছে না প্রজ্ঞা।অবশেষে সংবাদ মাধ্যমে প্রজ্ঞার সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর শিশুটির সেই দুঃসময়ের সংবাদ যায় রাজ্য শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের কাছে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্য শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের সদস্য শর্মিলা চৌধুরী ছুটে যান উদয়পুর পশ্চিম খিলপাড়াস্থিত প্রজ্ঞার জেঠুর বাড়িতে। সেখানে গিয়ে শিশুটির জেঠু এবং জেঠিমার সাথে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বলে সম্পূর্ণ ঘটনাটি জানতে পারেন। পরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কমিশনের সদস্যা শর্মিলা চৌধুরী জানান, এটি একটি নিত্যান্তই হৃদয় বিদারক ঘটনা। সব শিশুরই বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার অধিকার রয়েছে । আর তাই শিশুটি যাতে স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করে তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে পারে তার জন্য রাজ্য শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।এখন দেখার প্রজ্ঞার স্কুলে ভর্তির ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয় রাজ্য শিশু সুরক্ষা ও অধিকার কমিশন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post দেশে আবারো বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা। খুব শীঘ্রই যে কোনও সময় হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্প ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা
Next post পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা ভিত্তিক বিশ্ব যক্ষা দিবস পালন করা হয় মধ্য প্রতাপগড় শহরে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অধীন জগহরিমুরা হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টারে।
%d bloggers like this: