মুক্তিপণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা নিতে এসে পুলিশের জালে আটক দুই অপহরণকারী যুবক। তবে এখনো পর্যন্ত অপহৃত বহি রাজ্যের দুই যুবককে উদ্ধার করা যায়নি। জানা যায়,, গত ৮ ই ফেব্রুয়ারি আসামের পাথারকান্দি থানা অন্তর্গত সুনাতলা এলাকার দুই যুবক ফয়েজ আহমেদ,(৩২), আলাল উদ্দিন,,(৩০) বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় বাজারে উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও দুই যুবক বাড়ি ফিরে আসেনি। তাতে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ে গোটা পরিবার। অনেক খোঁজাখুঁজির করার পরও তাদের কোন হদিস না পেয়ে, আসামের পাতারকান্দি থানায় দ্বারস্থ হয় অপহরিত দুই যুবকের পরিবার। যথারীতি দশ ই ফেব্রুয়ারি ফয়েজ আহমেদের বাড়িতে ফোন করে সোনামুড়া থানাধীন কালাপানিয়া এলাকার যুবক আবুল কালাম। এবং তাদের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ বাবদ মোট এক কোটি টাকা দাবি করে। অন্যথায় তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। এই বিষয়ে কাউকে জানালে তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। বলা যায় এক প্রকার হিন্দি সিনেমা স্টাইল। এর মাঝে ফয়েজ আহমেদ এবং আলাল উদ্দিনের উপর অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালায় আবুল কালাম সহ তার সাগরেদরা, তাদের শরীরে অনবরত বিষাক্ত ইনজেকশন পোষ্ট করা হত এমনটাই অভিযোগ করেন ফয়েজ আহমেদের বড় ভাই। অভিযুক্তরা তার পুরো ভিডিও মোবাইল বন্দী করে তাদের মোবাইলে প্রেরণ করত। এক সময় সেই খবর পেয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ফয়েজ আহমেদের বড় ভাই। বাড়িতে কান্নার রোল ওঠে। পুরো বিষয়টি পাথারকান্দি থানাকে অবগত করে ফয়েজ আহমেদের পরিবার তরফে। সেই খবর মোতাবেক পাতারকান্দি থানা সোনামুড়া থানাকে অবগত করে। কিন্তু সোনামুড়া থানা সে দিকে কর্ন পাত করিনি। জানা গেছে আবুল কালাম স্থানীয় শাসক দলের নারী নেত্রীর স্বামী। খুবই প্রভাবশালী বটে। এলাকায় কুখ্যাত নেশাকরবারী হিসেবে বেশ সুপরিচিত। বোধহয় সেই কারণে স্থানীয় পুলিশ বাবুরা বেশি একটি কদর করেনি তাদের অভিযোগে ,,এমনটাই চাঞ্চল্যকর দাবি অপরিত যুবকের পরিবারের। পরবর্তীতে গত 12 ই ফেব্রুয়ারি পাতারকান্দি থানা পুলিশের বিশেষ একটি টিম ত্রিপুরা সোনামুড়া থানায় উপস্থিত হয় এবং আবুল কালামের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। কিন্তু তাদেরকে উদ্ধার করা যায়নি। অভিযোগ,, সোনামুড়া থানা তাদেরকে কোন প্রকারের সহায়তা করেনি যার ফলে অপরিত ২ যুবককে উদ্ধারে ব্যর্থ আসাম পুলিশ। অপরিত ফয়েজ আহমেদের বড় ভাই বরাবরই থানার বড়বাবুর নিকট তাদের ভাইকে উদ্ধার করে দেবার আকুতি মিনতি করে। এক সময় অভিযুক্ত আবুল কালাম এর স্ত্রী তথা নারী নেত্রী নাসিমা বেগমকে থানায় ডেকে এনে তাদের সাথে বিষয়টি মিটমাট করেন সুপরামর্শ দেয় সোনামুড়া থানা। দুইদিন অতিক্রান্ত হয়ে গেল ,,আশানারুপ কোন ফলাফল না পেয়ে ১৩ই ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়িতে ফিরে যায় ফয়েজ আহমেদের পরিবার। গত ৫ই মার্চ পুনরায় অভিযুক্ত আবুল কালাম ফয়েজ আহমেদ এবং আলাল উদ্দিনের বাড়িতে যোগাযোগ করে তাদের নিকট মুক্তিপণ বাবদ ১০ লক্ষ চায় । মুক্তিপণ বাবদ পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ তাদেরকে দিয়ে দিলে আসামের দুই যুবককে ছেড়ে দেবার আশ্বাস দেয় নারী নেত্রীর প্রভাবশালী স্বামী আবুল কালাম। সেই আশ্বাস পেয়ে গতকাল ফয়েজ আহমেদের পরিবার বাড়ির ভিটি বিক্রি করে ৫ লক্ষ টাকা আবুল কালামের স্ত্রী নাসিমা বেগমের একাউন্টে পাঠায়। এবং বাদবাকি ৫ লক্ষ টাকা ৬ ই মার্চ তাদেরকে দিয়ে দেবার কথা ছিল। এইদিকে ফয়েজ আহমেদ এবং আলাল উদ্দিনের উপর শারীরিক নির্যাতনের মাত্রা যেন আরও দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। শেষ পর্যন্ত অসহায় হয়ে ফয়েজ আহমেদের বড় ভাই ৬ই মার্চ ত্রিপুরায় আসে এবং অপরিত দুই ভাইকে উদ্ধারের দাবিতে সিপাহীজলা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিব সূত্রধরের দ্বারস্থ হয়। এদিকে অনবরত আবুল কালাম ফয়েজ আহমেদের বড় ভাইকে অর্থ দেবার জন্য মোবাইলে ফোন করে অনবরত চাপ সৃষ্টি করে আসছে। সেই মোতাবেক আহমেদের পরিবার আবুল কালামকে চরিলাম বাজারে এসে অর্থ নিয়ে যাবার টুপ দেয় । সেই লোভে পড়ে আবুল কালাম এর ছোট ভাই রিপন মিয়া চরিলাম এলাকায় মুক্তিপণ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা নিতে উপস্থিত হয়। এদিকে খবর পেয়ে অপহরণকারীদের পাকড়াও করতে চরিলাম এলাকায় একটি নির্জন স্থানে এম্বুসে বসে বিশালগড় থানার এসআই রাকেশ দেবনাথ সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। মুক্তিপণ বাবদ অর্থ নিতে আসে আবুল কালামের ছোট ভাই রিপন মিয়া এবং এবং তার এক সহযোগী। এবং সাথে মার্চ রাত অনুমানিক একটা নাগাদ চরিলাম বাজারে অপহরণকারীদের হাতেনাতে ধরে ফেলে বিশালগড় থানার পুলিশ। তাদেরকে গ্রেফতার করে প্রথমে বিশালগড় থানায় এবং পরবর্তীতে বিশ্রামগঞ্জ থানায় স্থানান্তর করে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অপহরিত আসামের দুই যুবককে উদ্ধার করা যায়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের স্বদোর্থক ভূমিকায় ২ কুখ্যাত অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হল বিশালগড় থানার পুলিশ। এদিকে সোনামুড়া থানা পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আরো একবার প্রশ্নের মুখে। এদিকে অপহরিত ২ যুবককে উদ্ধার করে দেবার জন্য রাজ্য প্রশাসনের নিকট আকুতি মিনতি জানায় ফয়েজ আহমেদের বড় ভাই।