ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের সীমান্ত সুরক্ষা পর্যায়ের বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। ৫ দিন ব্যাপী এই সীমান্ত সম্মেলন ১৭ই জুলাই থেকে শুরু করে আজ ২১ শে জুলাই পর্যন্ত চলে। এটি দু দেশের মধ্যে ৫২ তম সীমান্ত সম্মেলন। বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ৯ জন সদস্যের প্রতিনিধি দল এই সম্মেলন অংশগ্রহণ করে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বিজেপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে ২০ জনের প্রতিনিধি দল এখানে যোগদান করে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে অভ্যর্থনা জানায় । সম্মেলনে সীমান্ত হত্যার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এটিকে শূন্যে নামিয়ে আনার আহবান জানান হয়। এর সঙ্গেই মাদক সহ বিভিন্ন চোরাচালান, মানব পাচার, অবৈধ সীমান্ত পারাপার, সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে আলোচনা চলে। বিএসএফ মহাপরিচালক বিজিবি মহাপরিচালককে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। সীমান্তে অপরাধ, মাদক চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
সীমান্ত অঞ্চলে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, মারধরের ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে সীমান্তে যৌথ টহল, বিশেষ করে রাত্রিকালীন টহল পরিচালনার ব্যাপারে উভয় দেশ সম্মতি জানায়। এছাড়া সীমান্তে হামলার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনতে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে যৌথ টহল, সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, জনসচেতনতা মূলক কর্মসূচিতে জোর দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার উপরে জোর দিয়ে নিষিদ্ধ পণ্যসামগ্রী আগ্নেয়াস্ত্র, জাল নোট , সোনার চোরা চালান, সীমান্ত অপরাধ দমনে উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সম্মত হয়েছে।
অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান থেকে দু দেশের সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে রুখতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের চিন্তাভাবনা চলে। উভয় দেশ ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা উন্নয়নমূলক কাজ ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়। সীমান্তের অভিন্ন নদী সমূহের বন্ধ থাকা তীর সংরক্ষণ করার কাজ আবার শুরু করতে উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আবার, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দ্রুত করার উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা চলে।
সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দু দেশই জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ, তথ্য আদান প্রদান ও সীমান্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে আলোচনা চলে। রাজশাহী, মাজারদিয়া, খানপুর এলাকায় জনসাধারণের সুবিধার্থে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীর ভারতীয় অংশের ১.৩ কিলোমিটার চ্যানেল ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের বিষয়ে আলোচনা চলে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা আখাউড়া-লাকসাম রেলওয়ে প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরুর ব্যাপারে আলোচনা করা হয়।দু দেশের মধ্যেই পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট রাখা ও পারস্পরিক আস্থা বাড়াতে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার আওতায় বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, পারস্পরিক সাক্ষাত্ ইত্যাদি বিষয়ে উদ্যোগ নেবার কথা বলে। দু’ দেশের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ককে মজবুত করা, সীমান্তে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের বিষয়ে দুদেশই সম্মত হয়।