তল্লাশি করতে গিয়ে চক্ষু চরকগাছ সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা সিবিআই-এর তদন্তকারী অফিসারদের। বাড়ির নিচে হ্যাঙ্গারের মতো করে তৈরি এক বিরাট হলঘর। হলঘরের দেওয়াল জুড়ে রয়েছে পপ সংস্কৃতির পোস্টার। আর ঘরের মধ্যে রাখা আস্ত একটি হেলিকপ্টার! দিওয়ান হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড বা ডিএইচএফএল কেলেঙ্কারি মামলার তদন্ত করছে সিবিআই।
সেই তদন্তের কাজেই পুনেতে অবিনাশ ভোসলে নামে, তহবিল তছরুপ এবং প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত এক নির্মাতার বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন তাঁরা। সেখান থেকেই বাজেয়াপ্ত করা হল একটি অগাস্টা ওয়েস্টল্যান্ড হেলিকপ্টার। প্রসঙ্গত, ৩৪,০০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে এই কেলেঙ্কারি মামলায়। এই জালিয়াতিকেই ভারতের সবথেকে বড় ব্যাঙ্ক জালিয়াতি বলে মনে করা হয়।
গত কয়েকদিন ধরেই এই কেলেঙ্কারির আয় থেকে অর্জিত সম্পদের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে সিবিআই। গত ২০ জুন ডিএইচএফএলের প্রাক্তন প্রধান কার্যনির্বাহী কর্তা কপিল ওয়াধওয়ান, দীপক ওয়াধাওয়ান এবং অন্যান্য শীর্ষকর্তাদের এই ব্যাঙ্ক জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি। তাদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন ১৭টি ব্যাঙ্কের একটি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। ডিএইচএফএল-এর জাল অ্যাকাউন্টবুক ব্যবহার করে ৩৪,৬১৫ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক লোন তোলা হয়েছিল। তারপর বিভিন্ন ভুয়ো সংস্থা এবং ‘বান্দ্রা বুকস’ নামে পরিচিত একটি সমান্তরাল অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম ব্যবহার করে ভুয়ো সংস্থাগুলিকে তারা ভুয়ো খুচরো ঋণ দিত। এইভাবেই ডিএইচএফএল-এর তহবিল থেকে চুরি করত তারা।
ফরেনসিক অডিটে দেখা গিয়েছে, যথাযথ সিকিওরিটি ডিপোসিট অর্থাত্ নিরাপত্তা আমানত বা অঙ্গীকার ছাড়াই ভুয়ো সংস্থাগুলিকে বিরাট মূল্যের ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ঋণ অনুমোদন এবং বিতরণের কোন ফাইলও রাখা হয়নি। শুধুমাত্র কিছু ই-মেইল বিনিময়ের মাধ্যমেই এই বড় অঙ্কের ঋণগুলি দেওয়া হয়েছিল। পুনেতে যে অবিনাশ ভোসলের বাড়ি থেকে হেলিকপ্টার উদ্ধার করা হয়েছে, তিনিই লন্ডনে একটি সম্পত্তি ক্রয়ের জন্য ডিএইচএফএল থেকে পাওয়া ৩০০ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন। আরও ৪৩ কোটি টাকা এবিআইএল ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ১৪০ কোটি টাকা মেট্রোপলিস হোটেলকে দেওয়া হয়েছিল। দুটিরই মালিক অবিনাশ ভোসলে। ২০১৮ সালের এপ্রিল-মে মাসে ইয়েস ব্যাঙ্ক ডিএইচএফএল-এ বিনিয়োগ করেছিল। এর পরপরই কপিল ওয়াধওয়ান এই ঋণগুলি অনুমোদন করেছিলেন বলে দাবি সিবিআইয়ের।
এই মামলার তদন্তে নেমে, ডিএইচএফএল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্তদের সম্পত্তি থেকে কোটি কোটি টাকার বিলাসবহুল পণ্যের খোঁজ মিলছে। চলতি মাসের শুরুতেই ওয়াধাওয়ান এবং এই কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত অন্যান্যদের কাছ থেকে ২৫টি বিলাসবহুল ঘড়ি বাজেয়াপ্ত করেছিল সিবিআই। প্রতিটি ঘড়ির দাম ছিল ১ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়াও, ৫৬টি পেইন্টিং বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যেগুলির সম্মিলিত মূল্য ৩৮ কোটি টাকা।