কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের উন্নয়নের ফানুস ফাঁসিয়ে দেওয়ার জেরে বরখাস্ত হলেন ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন সায়েন্সের ডিরেক্টর কে এস জেমস। বছরের পর বছর ধরে মিথ্যা উন্নয়নের গালভরা ভাষণ দিয়ে চলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘উজ্জ্বলা যোজনা’, ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর মতো মিথ্যার বেলুন ফুটো হয়ে গেল খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫’এর (NFHS-5) সমীক্ষা রিপোর্টে।

যা প্রকাশ্যে আসার পর রীতিমত শোরগোল পড়ে যায় সরকারি মহলে। দ্রুত ধামাচাপা দিতে এরপরই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হল সমীক্ষক সংস্থা IIPS-এর ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে। দেশের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমীক্ষা মনের মতো না হওয়ায় বহিষ্কার করা হল ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন সায়েন্সের ডিরেক্টর কে এস জেমসকে। মোদি সরকারের তরফে শুক্রবার সন্ধ্যায় জেমসকে ধরানো হল বহিষ্কারের চিঠি।

আগামী বছর দেশের লোকসভা নির্বাচন। তার আগে সরকারের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুন্ন না হয় তার জন্য স্বাধীন কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির থেকে সরকারের প্রশংসা সূচক সমীক্ষা রিপোর্ট আশা করেছিল মোদি সরকার। তবে নরেন্দ্র মোদির সেই আশায় জল ঢেলে দেয় ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে-৫ (NFHS-5)। তাদের এক একটি রিপোর্ট মোদি সরকারের মিথ্যার ফানুস ফুটো করে দিয়েছিল।

স্বচ্ছ ভারতের ভাঁওতা
একদিকে যখন দেশের স্বচ্ছ ভারতের গালভরা গল্প শুনিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী সেখানেই বাস্তব রিপোর্ট বলছে, দেশে ১৯ শতাংশ পরিবার শৌচালয় ব্যবহার করেন না। ব্যতিক্রম শুধু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ।

উজ্জ্বলা যোজনার ভাঁওতা
পাশাপাশি তাদের আরো একটি রিপোর্ট দাবি করে, দেশের ৪০ শতাংশ পরিবার রান্নার জন্য এখনো কাঠ ও উনুনের ওপর নির্ভরশীল। গ্রামাঞ্চলে ৫৭ শতাংশ মানুষ রান্নার গ্যাস ব্যবহার করেন না। অর্থাত্‍ নরেন্দ্র মোদির উজ্জ্বলা যোজনার ভাঁওতা প্রকাশ্যে আসে এই রিপোর্টে।

দেশের মহিলা স্বাস্থ্য উদ্বেগজনক
শুধু তাই নয়, তাদের আরও একটি রিপোর্ট বলছে, গোটা দেশজুড়ে ভয়াবহ ভাবে বাড়তে শুরু করেছে, রক্তাল্পতা রোগ। মূলত মহিলারাই এই অসুখে সর্বাধিক আক্রান্ত। এমনকি সরকারি সূত্রের খবর, পরবর্তী স্বাস্থ্য সমীক্ষায় অর্থাত্‍ NFHS-6-এ দেশের মানুষের অ্যানিমিয়ার পরিমাপ বাদের তালিকায় রাখছে কেন্দ্র।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনে থাকা IIPS-এর এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ হয় মোদি সরকার। এবং তড়িঘড়ি পদক্ষেপ নেওয়া হয় সমীক্ষক সংস্থা আইআইপিএস-এর বিরুদ্ধে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বরখাস্তের চিঠি ধরানো হয় সংস্থার প্রধান কে এস জেমসকে। উল্লেখ্য, হার্ভার্ড সেন্টার ফর পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট থেকে পোস্টডক্টরাল ডিগ্রি প্রাপ্ত এই আধিকারিক আইআইপিএস-এ যোগদানের আগে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি যোগ দেন IIPS-এ।

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের মোদি সরকারের তরফে এই ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়। সরকারের তাবেদারি করে না চললে স্বশাসিত সংস্থা গুলির ওপর মোদির বিষ নজর আগেও পড়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রকাশ্যে এসেছিল দেশের বেকারত্বের ভয়াবহ ছবিটা। সরকারকে বিপাকে ফেলা সেই রিপোর্ট প্রকাশে আসার পর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস কমিশনের একাধিক সদস্যকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়। এবারও দেখা গেল সেই একই ছবি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post বিশ্বের বৃহত্তম মিউজিয়াম – ‘যুগে যুগে ভারত’, থাকবে দেশের ৫ হাজার বছরের ইতিহাস
Next post নেশা সেবনকারিদের জন্য অভিনব শাস্তি !
%d bloggers like this: