রীতিমতো হিন্দি সিনেমার কায়দায় বাড়িতে ঢুকে সরকারি স্কুলের শিক্ষিকাকে ধারালো দা দিয়ে মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মাটিতে ফেলে চলে যাবার পর সতেরো দিন পর ফের ফোন করে খুনের হুমকি দিলো সরকারি শিক্ষিকাকে। ভীতসন্ত্রস্ত অসহায় সরকারি শিক্ষিকা প্রানভিক্ষা চাইলো রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর কাছে। ঘটনা কৈলাসহরের পাখিরবাদা গ্রামে। উল্লেখ্য, কৈলাসহরের গৌরনগর ব্লকের অধীনস্থ ইছবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তিন নং ওয়ার্ডের পাখিরবাদা গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রুখিয়া বেগম। রুখিয়ার জন্মের পর থেকেই রুখিয়ার মা মানষিক অবসাদগ্রস্ত। রুখিয়ার বাবা পেশায় দিনমজুর। অভাব অনটনের মধ্যেই রুখিয়া কৈলাসহর কলেজ থেকে ২০১৮সালে রাস্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে পাশ করে ২০২২সালে টেট সম্পন্ন করে ২০২২সালের ডিসেম্বর মাসে সরকারি স্কুলের শিক্ষিকার চাকুরী পায়। রুখিয়া ঊনকোটি জেলার পেচারতলের নালকাটা এডিসি ভিলেজের অন্তর্ভুক্ত এক সরকারি স্কুলে শিক্ষিকতা করে। রুখিয়া আট মার্চ শনিবার দুপুরে কৈলাসহরের স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে জানায় যে, কয়েক বছর পূর্বে কৈলাসহরের পশ্চিম ইয়াজিখাওড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জলালের সাথে ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয় এবং পরবর্তী সময়ে তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। পরবর্তী সময়ে ২০২৫সালের কুড়ি জানুয়ারি কৈলাসহর আদালতে রেজিষ্ট্রি করে দুজনের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক দিন পর রুখিয়া জানতে পারে যে, আব্দুল জলাল রুখিয়াকে বিয়ে করার পূর্বে আরও দুটি বিয়ে করেছে এবং আব্দুল জলালের চার পাঁচটি সন্তানও রয়েছে। এসব জেনে বিয়ের আঠারো দিন পর ২০২৫ সালের সাত ফেব্রুয়ারি রুখিয়া কৈলাসহর আদালতে আব্দুল জলালকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। এই ডিভোর্স দেওয়ার পর থেকে রুখিয়ার জীবনে একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলছে। ঊনিশ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রুখিয়া ঘুম থেকে উঠে প্রাকৃতিক কাজে ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুমে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে আব্দুল জলাল ধারালো দা দিয়ে রুখিয়ার মাথায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে আব্দুল জলাল পালিয়ে যায়। রুখিয়ার চিৎকার চেচামেচি শোনে গ্রামবাসীরা এগিয়ে আসে এবং গ্রামবাসীরা সাথে সাথেই অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের কর্মীদের খবর দেয়। খবর পাওয়া মাত্রই অগ্নি নির্বাপক দপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রুখিয়াকে উদ্ধার করে ঊনকোটি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। রুখিয়ার মাথায় এতই জোরে আঘাত লাগে যে, মাথায় আটটি সেলাই লাগে। কুড়ি ফেব্রুয়ারি সকালে রুখিয়ার বাবা কৈলাসহর মহিলা থানায় আব্দুল জলালের নামে লিখিত অভিযোগ করে। প্রায় ছয়দিন রুখিয়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর চব্বিশ ফেব্রুয়ারি রুখিয়া জেলা হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়িতে আসে। দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে তিন মার্চ থেকে রুখিয়া প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ও আব্দুল জলাল রুখিয়াকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলতো, ‘তুই সুস্থ হয়ে কিভাবে পেচারতলে গিয়ে চাকুরী করবে সেটা আমি দেখে নেবো’। স্কুলে যাওয়া শুরু করার পর আব্দুল জলাল রুখিয়াকে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলে যে, ‘আগামী পনেরো দিনের মধ্যে মেরে ফেলবে এবং তোর কোন বাবা আছে বলে রাখিছ আমি পনেরো দিনের মধ্যে তোকে মেরে ফেলবো’। এই হুমকি পাবার পর থেকে রুখিয়া ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। বাড়িতে মা মানসিক অবসাদগ্রস্ত এবং বৃদ্ধ বাবাও অসুস্থ। মা বাবা ছাড়া বাড়িতে রুখিয়ার কেউ নেই। প্রানে মেরে ফেলার হুমকি পাবার পর থেকে রুখিয়া নিজ বাড়িতেও বসবাস করছে না। গ্রামে একদিন ওর বাড়ি, পরের দিন আরেক বাড়ি এভাবে রুখিয়া লুকিয়ে লুকিয়ে বসবাস করছে। প্রানে মেরে ফেলার হুমকির রেকর্ডিংটি রুখিয়া পুলিশকে দিয়েছে। গ্রামবাসীরা বলছে আব্দুল জলাল এখনও তার গ্রামে নিজ বাড়িতেই আছে এবং প্রকাশ্যেই ঘুরাফেরা করছে। অথচ পুলিশ নাকি আব্দুল জলালকে খুঁজে পাচ্ছে না বলে রুখিয়াকে জানিয়েছে। কি কারনে পুলিশ আব্দুল জলালকে গ্রেফতার করছে না এটা একমাত্র পুলিশ ছাড়া কেউ জানেনা। এব্যাপারে কৈলাসহর মহিলা থানায় যোগাযোগ করে জানা যায় যে, রুখিয়ার বাবার লিখিত অভিযোগ পাবার সাথে সাথেই পুলিশ মামলটি রেজিষ্ট্রি করেছে। পুলিশ অভিযুক্ত আব্দুল জলালকে গ্রেফতার করার জন্য ফোন ট্রেক করে রেখেছে। অসহায় নিরীহ দুঃস্থ ভীতসন্ত্রস্ত রুখিয়া বেগম নিজের প্রান বাঁচানোর জন্য রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর কাছে মিডিয়ার মাধ্যমে প্রানভিক্ষা চাইলো। মূখ্যমন্ত্রী যেন এব্যাপারে একট পদক্ষেপ নেন এবং খুব শীঘ্রই আব্দুল জলালকে পুলিশের হেফাজতে আনেন

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post BMS’র তৈরি জলছত্র ভেঙ্গে চুরমার করে দিল দুষ্কৃতিরা
Next post এক দিবসীয় ব্লক ভিত্তিক পশু-পাখি মেলার আয়োজন হয় ধনপুরে
%d bloggers like this: