খোদ জনপ্রতিনিধি সহ ঊনকোটি জেলার কৈলাসহর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ-এর বিল পরিশোধ করছে না প্রায় দু বছর যাবৎ। তারপরেও নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান করে যাচ্ছে কৈলাসহরের বিদ্যুৎ পরিসেবা প্রদানকারী সাই কম্পিউটার লিমিটেড। ঘটনা কৈলাসহর মহকুমার গৌরনগর ব্লকের অন্তর্গত শ্রীনাথপুর এলাকায়। তত্ত্ব প্রমান সহ সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সাই কম্পিউটার্স এর পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, শ্রীনাথপুর এলাকায় মোট ৭৯৩ জন গ্ৰাহকের কাছে বকেয়া টাকা পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত।চলতি মাস অব্দি ঐ সমস্ত গ্রাহকদের কাছে সাই কম্পিউটার্সের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়ে গেছে ১৩ লক্ষ ২৫ হাজার ২৮২ টাকা। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সাই কম্পিউটার লিমিটেড কৈলাসহরের বিদ্যুৎ পরিসেবার দায়িত্ব নেবার পর থেকে এই বকেয়া পড়ে আছে। তারমধ্যে সর্বমোট বিল কালেকশন হয়েছে ১২৪ জন গ্রাহক থেকে মোট ৪৫ হাজার ৮১১ টাকা। তারপরেও বকেয়া রয়ে গেছে ৭৯৩ জন গ্ৰাহকের কাছে। সাংবাদিক সম্মেলনে সরাসরি এই তত্ত্ব দেন সাই কম্পিউটার লিমিটেডের প্রজেক্ট ইনচার্জ গৌতম ঘোষ
তাছাড়া, গত ২৮ জুন ৬৩ কেভি ট্রান্সফরমার হঠাৎ করে বিকল হয়ে পড়ে শ্রীনাথপুর এলাকায়। সে সময় বকেয়া বিলের কথা উল্লেখ করে সাই এর তরফে কৈলাসহরের মহকুমা শাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল সংশ্লিষ্ট এলাকার বিষয় নিয়ে। যার প্রতিলিপি ৩০শে জুন ত্রিপুরা স্টেট ইলেকট্রিসিটি কর্পোরেশন লিমিটেড এবং কৈলাসহর থানার ওসি সহ আরও অন্যান্য আধিকারিকদের দেওয়া হয়েছিল। ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ার পর সাই কর্তৃপক্ষ এলাকায় গিয়ে গ্রাহকদের সাথে কথা বললে গ্রাহকরা ট্রান্সফর্মার পুনরায় ইনস্টলেশনের কথা বলেন এবং বিল প্রদানের কথা দিলে ফের ট্রান্সফর্মার ঠিক করে দেওয়া হয় ২রা জুলাই। কিন্তু গ্রাহকদের কথামতো ট্রান্সফরমার ঠিক করে দিলেও গ্রাহকরা সাই কর্তৃপক্ষকে বিল প্রদান করেননি বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়। চলতি মাসের ৪ঠা জুলাই ফের অন্য একটি ৬৩ কেভি ট্রান্সফরমার বিকল হয় শ্রীনাথপুর এলাকায়। উক্ত এলাকা গুলোতে হুকলাইন, হিটার এবং মোটরের অসংখ্য অবৈধ সংযোগ রয়েছে বলে জানান সাই কম্পিউটার্সের কৈলাসহর প্রজেক্ট ইনচার্জ গৌতম ঘোষ। চৌঠা জুলাই শ্রীনাথপুরের সেনাপতি পাড়ায় ট্রান্সফর্মার বিকল হওয়ার পর ছয় জুলাই ট্রান্সফরমার পুনরায় ইনস্টলেশনের দাবিতে রাস্তা অবরোধে বসে শ্রীনাথপুর গ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। গ্রাহকরা রাস্তা অবরোধে বসলে ছয় জুলাই ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছান ডি.সি.এম প্রদীপ দেববর্মা, সাই কম্পিউটার লিমিটেডের মেইনটেনেন্স ইনচার্জ শান্তনু সাহা এবং ইঞ্জিনিয়ার পার্তপ্রতিম দেব সরকার। সে সময়ও বকেয়া বিলের প্রসঙ্গ উঠলে সমগ্র গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে জানান যে,তারা বিল পরিশোধ করবেন এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই। সেই মোতাবেক ফের ট্রান্সফর্মার পরিবর্তন করা হয়। গ্রাহকদের কথা অনুযায়ী পরের দিন সাই কম্পিউটার্স এর কালেকশন ভ্যান বকেয়া বিল কালেকশন করতে শ্রীনাথপুর এলাকায় গেলে সর্বমোট ৪৯০ টাকা কালেকশন হয়েছে মাত্র একজন গ্রাহকের থেকে। ১২ এবং ১৪ জুলাই ফের ক্যাশ ভ্যান এলাকায় গেলেও কোন ধরনের কালেকশন দেওয়া হয়নি। সাই কম্পিউটার্সের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রজেক্ট ইনচার্জ গৌতম ঘোষ জানিয়েছেন, সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা বকেয়া রেখে তার পরেও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এবং গ্রাহকদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে বিদ্যুৎ পরিষেবা বহাল রেখেছে সাই
সাংবাদিক সম্মেলনে গৌতম ঘোষ আরও বলেন যে, এভাবে বিল বকেয়া থাকলে বিদ্যুৎ পরিসেবা বহাল রাখতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে বলা যায় কিছুদিনের মধ্যেই শ্রীনাথপুর এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হবে প্রায় ৬ শতাধিক গ্রাহকের। তাই প্রত্যেক বিদ্যুৎ গ্রাহকের বাড়িতে নোটিশ পাঠানোর কাজ সাই কম্পিউটার্স শুরু করেছে। সাই কম্পিউটার্স এর কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রজেক্ট ইনচার্জ গৌতম ঘোষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার বিক্রম সিং, সাই মেনটেনেন্স ইনচার্জ শান্তনু সাহা এবং ইঞ্জিনিয়ার পার্থপ্রতিম দেব সরকার।উল্লেখ্য, গৌরনগর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান নারান সিংহ শ্রীনাথপুর গ্রামের সেনাপতি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। চেয়ারম্যান নারান সিংহ নিজের বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ-এর বিল পরিশোধ করছেন না বলে গ্রামের মানুষরা সংবাদ মাধ্যমকে জানান। এভাবে জনপ্রতিনিধি হয়ে উনি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ-এর বিল পরিশোধ না করায় সরকারেরই বদনাম করছেন বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত।