স্বাধীনতার ৭৬ বছর পূর্ণ হল। আজ দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস। দিনভর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান। জাতীয় সঙ্গীত বাজবে গোটা দেশে। ‘জন গণ মন অধিনায়ক’-এর সুরে মুখরিত হবে চারিদিক। এই জাতীয় সঙ্গীত দেশের গর্ব, দেশের অহংকার। কিন্তু স্বাধীনতার পর কী হবে জাতীয় সঙ্গীত, তা নিয়ে এককালে অনেক আলোচনা হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, স্বাধীন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত কী হবে, তা নিয়ে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের থেকে মতামত জানতে চেয়েছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। সেই সময় জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে ‘জন-গণ-মন’-কে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। প্রাক্তন আমলা সরোজ চক্রবর্তীর লেখা ‘মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে’ বইয়ের প্রথম খণ্ডে সেই সময়ের বেশ কিছু চিঠি উঠে এসেছে। জওহরলাল নেহরু ও বিধানচন্দ্র রায়ের মধ্যে তখন বেশ কিছু চিঠি চালাচালিও হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নেহরু ‘জন-গণ-মন’-কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত করার বিষয়ে যে মতামত জানতে চেয়েছিলেন, তাতে কী বলেছিলেন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিসি রায়? প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর পাঠানো চিঠির বয়ান,

অর্থাৎ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুখ্যাতি ও বিশ্বব্যাপী তাঁর গ্রহণযোগ্যতার কথা মেনে নিয়েও ‘জন-গণ-মন’-কে জাতীয় সঙ্গীত করার ক্ষেত্রে আপত্তি ছিল বিধানচন্দ্র রায়ের। তাঁর মতে, বন্দেমাতরমের মধ্যে যে দেশাত্মবোধ রয়েছে, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে যেভাবে বন্দেমাতরম গানটি জড়িয়ে রয়েছে, তাতে বন্দেমাতরম গানটিই জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার দাবিদার। সেই হিসেবে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের সঙ্গে ‘জন-গণ-মন’ যে অতটা জড়িত নয়, সেটাও বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে যে রাজ্য মন্ত্রিসভাতেও আলোচনা হয়েছে এবং সর্বসম্মতিক্রমে বন্দেমাতরমের পক্ষেই মত এসেছে, সেটাও চিঠিতে জানিয়েছেন বিসি রায়। কেন ‘জনগণমন’র বদলে ‘বন্দেমাতরম’কে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা উচিত, তা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। যদিও সঙ্গে এটাও বলেছিলেন যে এই বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত আইনসভাই নেবে।

বিধানচন্দ্র রায়ের চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করে উত্তর দিয়েছিলেন জওহরলাল নেহরুও। সেখানে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, ‘বন্দেমাতরম’-কে জাতীয় সঙ্গীত করার ক্ষেত্রে কোথায় সমস্যা এবং কেন ‘জনগণমন’ জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার জন্য অগ্রগণ্য। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ‘বন্দেমাতরম’-এর ভূমিকা যে অনস্বীকার্য, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন নেহরুও। কিন্তু তারপরও কোন কোন মাপকাঠিতে ‘বন্দেমাতরম’-কে জাতীয় সঙ্গীত করার ক্ষেত্রে আপত্তি, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা চিঠিতে লিখেছিলেন জওহরলাল নেহরু। দেখে নিন নেহরুর সেই চিঠির বয়ান…

অর্থাৎ, এই চিঠিতে জওহরলাল নেহরু বুঝিয়ে দিয়েছেন, জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার জন্য কেন ‘জনগণমন’-ই শ্রেয়। সেক্ষেত্রে জাতীয় সঙ্গীত যে স্বাধীনতার আগের কথার বদলে, স্বাধীনতা পরবর্তী আশাপূরণ, স্বপ্নপূরণের কথা বলবে, সেই কথাই বোঝাতে চেয়েছেন নেহরু। সেই কারণে ‘বন্দেমাতরম’-এর থেকে ‘জনগণমন’ জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার দিক থেকে এগিয়ে বলেই মনে করেছিলেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

নেহরুর থেকে চিঠি পাওয়ার পরেও দমে যাননি বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। তিনি আবার পাল্টা চিঠি পাঠিয়েছিলেন জওহরলাল নেহরুকে। নেহরুর মতের সঙ্গে তাঁর কোথাও আপত্তি এবং কেন তিনি নিজের মতে অবিচল, তাও ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন বিধানচন্দ্র রায়। ১৯৪৮ সালের ২৪ জুন সেই চিঠিতে কী লিখেছিলেন বিসি রায়? দেখুন সেই চিঠির বয়ান…

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের জাতীয় সঙ্গীত বেছে নেওয়ার সময় এভাবেই ‘বন্দেমাতরম’ অন্যতম দাবিদার হয়ে উঠে এসেছিল। জওহরলাল নেহরু ও বিধানচন্দ্র রায়ের মধ্যে এই চিঠি বিনিময়ের মধ্যেই তা উঠে এসেছে। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ‘বন্দেমাতরম’-এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য, সে কথা মেনে নিয়েও কেন ‘জন-গণ-মন’কেই জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেছে নেওয়া হল, তারও একটা আভাস পাওয়া যায় এই চিঠিগুলির মাধ্যমে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous post ফের একবার হিমাচল প্রদেশে হড়পা বানে কমপক্ষে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে
Next post প্রকাশ্য দিবালোকে ৪ ভাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা !
%d bloggers like this: