হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বী বাঙ্গালীদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই পার্বণ গুলির মধ্যে পৌষ বা মকর সংক্রান্তি বাঙালি সংস্কৃতির একটি বিশেষ উৎসব বা ঐতিহ্যবাহী দিন। বাংলা মাস অনুযায়ী পৌষ মাসের শেষ দিনটিতে এই উৎসব পালন করা হয়। শুধু বাঙালিরায় নন, আমাদের দেশের নানা প্রান্তে এই দিনটিকে নানা ভাবে বিশেষ বিশেষ উৎসবের সঙ্গে পালন করা হয়। বাঙালিরা এই দিনটিতে বিশেষ পূজার্চনার পর পিঠে-পুলি বানিয়ে খাওয়া দাওয়া করে। এবছর পৌষ পার্বণ রবিবার। রাজ্যের জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সব অংশের মানুষ মেতে উঠেন এই উৎসবে। সকাল থেকে রাজ্যের শহর ও গ্রামাঞ্চলে চলে উৎসবের আমেজ। সকালে পূণ্য স্নান শেষে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে পিঠে দান করে শুরু হয় সংক্রান্তির আমেজ। যদিও শহরের ডটকমের যুগে পিঠে পুলি তৈরি করা, আলপনা আঁকা, বুড়ির ঘর তৈরি করে বনভোজন করার মজা অনেকটাই অতীতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এখনো তা রয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন সবেতেই আমূল পরিবর্তন চলছে। পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তির সেই জৌলুস শহরাঞ্চলে না দেখা গেলেও গ্রামাঞ্চলে কিন্তু এখনো সংক্রান্তির জৌলুস লক্ষ্য করা যায় প্রত্যেকের বাড়ি-ঘরে। শহরের উঠোন গুলিতে আলপনা আঁকার ঐতিহ্য ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলেও গ্রামাঞ্চলের বাড়ি গুলিতে সেই জৌলুস কিন্তু এখনো প্রত্যক্ষ করা যায়।মকর সংক্রান্তির দিন সাধারণত সূর্যদেবের পুজো করা হয়। তাঁর আশীর্বাদে আমাদের সকল রোগ-ব্যাধি দূর হয় বলে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন।তবে
পৌষের সংক্রান্তি মানেই পিঠে, পুলি, পায়েস দিয়ে রসনাতৃপ্তি এবং ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে সংক্রান্তির স্নান শেষে খড় দিয়ে তৈরি বুড়ির ঘরে আগুন দিয়ে গ্রাম জুড়ে আট থেকে আশির শরীর উষ্ণ করার ছবি। এখানেই শেষ নয়, সবুজ শ্যামল গাঁয়ের বাড়ির বিরাট উঠোনে জায়া, জননীরা নানা রঙের আলপনা এঁকে ধান, দূর্বায় পুজো সারেন। ঘরের আসনে তিল-কদমায় ঠাকুর সেবা-সহ আরও নানা আয়োজন হয় পৌষ সংক্রান্তিতে।তবে বদলে যাওয়া এই আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় এখনও দূর গাঁয়ে পৌষ সংক্রান্তির উৎসব নিয়ে আসে আনন্দ বার্তা। পৌষ সংক্রান্তিতে নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় স্নিগ্ধ সবুজ গ্রাম। এই চিত্রই রবিবার যেন দেখা গেল রাজ্যের প্রতিটি গ্রামীণ এলাকাগুলিতে। তবে শহরেও বেশ কিছু পরিবার আজও সমান আন্তরিকতার সঙ্গে এবং নানা আয়োজনে পালন করে পৌষ সংক্রান্তির উৎসব। বাড়িতেই তৈরি করেন পিঠে-পুলি। সব মিলিয়ে এবারও উৎসবের আমেজে রাজ্যে উদযাপিত পিঠেপুলির উৎসব পৌষ পার্বণ।